ঢাকা,সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

জেলার সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত, বাড়ছে রোগের ঝুঁকি

শাহীন মাহমুদ রাসেল ::  মশার কামড়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শীত শেষ হওয়ার পরপরই পৌরসভাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মশার অত্যাচারে অস্থির হয়ে উঠেছে জেলাবাসী। দিন নেই, রাত নেই প্রতিমুহুর্তেই চলছে এর অত্যাচার। বাসাবাড়ি, অফিস, খেলার মাঠসর্বত্রই মশা আর মাছির উপদ্রব। মশার অত্যাচারে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতালগুলোও।

এবার মশার উৎপাত এত বেশি যে কয়েল, স্প্রে , মশা মারার ব্যাট কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মশার কামড়ে যেমন অতিষ্ট এলাকাবাসী। তেমনি বাড়ছে মশাবহিত রোগের ঝুঁকিও। ফলে আবারও চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আগমন ঘটবে কিনা তা নিয়ে বিরাজ করছে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক। গত বছর আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিয়েছিল এর প্রার্দুভাব। এ রোগে অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

যদিও এখন যেসব মশা কামড়াচ্ছে, সেগুলো সাধারণত কিউলেক্স মশা। কিন্তু এডিস মশার উপদ্রপ যে আবারও শুরু হবে না তাঁর কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছে না জেলাবাসী। রামু সিকলঘাটের বাসিন্দা শহীদ উল্লাহ। চার মাস আগে তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয় তিনি। কিন্তু চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সে চিকুনগুনিয়ায় প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তিনি জানান, চার মাসে আগে রোগে আক্রান্ত হই। কিন্তু এখনো চিকুনগুনিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এখনো প্রায়ই শরীরে যন্ত্রণা হয়। মাঝে মাঝে জ্বরে ও পড়তে হয়।

মশাবাহিত রোগ নিয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে সাথে কথা হলে তারা জানান, মশা প্রাণীটি ক্ষুদ্র হলেও খুবই মারাত্মক। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, গোদ রোগসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সদ্যজাত শিশুগুলোর বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি মশার উপদ্রবটা বেড়েছে।

এক জায়গায় বসলেই একসাথে অগনিত মশা ঘিরে ধরে। একটা মারছি তো আরেকটা কামড়াচ্ছে। রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। তবে যদিও মশার উপদ্রব তীব্রমাত্রায়। সেগুলো হল কিউলেক্স নামক মশা। যদিও এ মশা কামড়ালে রোগের সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু এখনতো কোনটি কিউলেক্স আর কোনটি এডিস, কোনটি স্ত্রী, কোনটি পুরুষ খালি চোখে আর বোঝার উপায় নেই।

ফলে কোনটা এডিস মশা আর কোনটার কামড়ে চিকুনগুনিয়া, কোনটার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর বা জিকা ভাইরাস সংক্রমিত হবে তা বোঝার উপায় নেই। তাই অবশ্যই মশা কামড় থেকে যতদূর সম্ভব নিজেদের বিরত রাখা উচিত। নিজেদের বাড়ির আশে পাশে থাকা আঙিনা, নর্দমা, ডোবা, ফুলের টব, ছাদের বাগান,ভবনের চৌবাচ্চা আর যদি ঝোপঝাড় থাকে সে সকল স্থানগুলো পরিস্কার রাখতে হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এদিকে মশার কামড়ে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শহরবাসী। শহরবাসীর অভিযোগ কিছুতেই মশার উপদ্রব কমছেনা। বরং আগে রাতে কামড়াতো এখন দিনেও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রনায় শান্তিতে কাজকর্ম করা তো দুরের কথা ঠিকমতো স্থির হয়ে বসা পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছেনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন নর্দমায় ময়লা পানি জমে আছে। সেসব ময়লা পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। সড়কের পাশে নালা, ড্রেন ও ময়লার স্তূপ। বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ নানা রোগের ভঙ্কর সব মশা। বিশেষ করে হাশিমিয়া মাদ্রাসা গেইট, তারাবানিয়ার ছড়া, পেশকারপাড়া, শহীদ স্মরণি রোড, বাজারঘাটা পাড়া, পুরাতন গাড়ীর মাঠ এলাকা, গোল দীঘির পাড় ও আদালত চত্বর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে।

পেশকার পাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আগের তুলনায় মশার উৎপাত বাড়ছে। কিছু মশা ছোট আকারের এবং কিছু মশা বড়। এসব মশার কামড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আর বাচ্চাদের জন্য এ মশা এক ভঙ্কর প্রাণী।

গাড়ীর মাঠ রোডের বাসিন্দা সুমন শর্মা বলেন, এমনিতেই প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে। তার ওপরে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ। কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। গরমে মশা থেকে বাঁচতে মশারিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি লাগোয়া। বাড়ির আঙ্গিনাগুলোতে ড্রেনের পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে মশা। এসব মশা নিধনে পৌরসভার নানা উদ্যোগের কথা থাকলেও বাস্তব চিত্রে তা দেখা যায় না।

হাসপাল সড়ক এলাকায় মশার উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে মশার উৎপাতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে রোগী ও স্বজনরা। সদর হাসপাতালের একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালে রাতের চেয়ে দিনে মশার উৎপাত বেশি থাকে। মশাগুলো বেশ বড় আকারের থাকায় খুব বিষাক্ত। হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশ খুবই অপরিষ্কার। আর ঠিকমতো মশা নিধনের ওষুধ না দেয়ায় এর উপদ্রব বাড়ছে।

পাঠকের মতামত: